আমরা সবাই ‘সম্পদ' শব্দটির সাথে কমবেশি পরিচিত । আমাদের প্রতিদিনের আলোচনায় অনেকভাবে সম্পদ শব্দটি আসে । যেমন মি. সুজন অনেক সম্পদের মালিক । একজন অর্থনীতিবিদের কাছে সব জিনিস সম্পদ নয় । অর্থনীতিতে সম্পদ হলো সেই সমস্ত জিনিস বা দ্রব্য, যেগুলো পেতে চাইলে অর্থ ব্যয় করতে হয় । সংক্ষেপে আমরা এ দ্রব্যগুলোকে অর্থনৈতিক দ্রব্যও বলে থাকি । যেমন- ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, টিভি ইত্যাদি দৃশ্যমান বস্তুগত সম্পদ এবং ডাক্তারের সেবা, শিক্ষকের পাঠদান ইত্যাদি অদৃশ্যমান বা অবস্তুগত সম্পদ। উল্লিখিত জিনিসগুলো পেতে চাইলে অর্থ ব্যয় করতে হবে। কোনো জিনিসকে যদি অর্থনীতিতে সম্পদ বলতে হয়, তবে তার চারটি বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক । বৈশিষ্টগুলো হলো-
১। উপযোগ : উপযোগ বলতে বোঝায় কোনো দ্রব্যের মানুষের অভাব মেটানোর ক্ষমতা । কোনো দ্রব্য সম্পদ হতে হলে সেই দ্রব্যের উপযোগ সৃষ্টির ক্ষমতা থাকতে হবে । উপযোগ নেই এমন দ্রব্য বা সেবা মানুষ অর্থ দিয়ে কেনে না ।
২। অপ্রাচুর্যতা: কোনো দ্রব্য সম্পদ হতে হলে তার পরিমাণ ও যোগান সীমিত থাকবে । যেমন : নদীর পানি, বাতাস প্রভৃতির যোগান প্রচুর । এগুলো সম্পদ নয় । তবে শ্রম ব্যবহার করে পানিকে বোতলবন্দি করলে পানিসম্পদে পরিনত হয়। অন্যদিকে জমি, গ্যাস, যন্ত্রপাতি -এগুলো চাইলেই প্রচুর পাওয়া সম্ভব নয় । অর্থাৎ এগুলো আমাদের কাছে অপর্যাপ্ত দ্রব্য । এগুলোও সম্পদ।
৩। হস্তান্তরযোগ্য : সম্পদের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হলো এর হস্তান্তরযোগ্যতা । হস্তান্তরযোগ্য বলতে বোঝায় হাত বদল হওয়া। অর্থাৎ যে দ্রব্যের মালিকানা বদল বা পরিবর্তন করা যায়, তা-ই হলো সম্পদ । বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিভাকে অর্থনীতির ভাষায় সম্পদ বলা যাবে না । কারণ তার প্রতিভাকে হস্তান্তর বা মালিকানা বদল করা সম্ভব নয় । আবার টিভির মালিকানা বদল করা যায় বলে টিভি সম্পদ ।
৪। বাহ্যিকতা : যে সমস্ত দ্রব্য মানুষের অভ্যন্তরীণ গুণ বোঝায় তা অর্থনীতির ভাষায় সম্পদ নয়। কেননা এর কোনো বাহ্যিক অস্তিত্ব আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। যেমন : কোনো ব্যক্তির কম্পিউটারের উপর বিশেষ অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান কিংবা কারো শারীরিক সৌন্দর্য বা চারিত্রিক গুণাবলিকে সম্পদ বলা যাবে না । তবে পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতিতে নানাভাবে এগুলোকেও বিক্রয়যোগ্য সম্পদে পরিণত করা সম্ভব ।
সম্পদের শ্রেণিবিভাগ
উৎস বা উৎপত্তির দিক থেকে সম্পদ তিন প্রকার । যথা-
১। প্রাকৃতিক সম্পদ : প্রকৃতির কাছ থেকে পাওয়া যেসব দ্রব্য মানুষের প্রয়োজন মেটায়, তাকে প্রাকৃতিক সম্পদ বলে । যেমন- ভূমি, বনভূমি, খনিজ সম্পদ, নদ-নদী ইত্যাদি২। মানবিক সম্পদ : মানুষের বিভিন্ন প্রকার যোগ্যতা ও দক্ষতাকে মানবিক সম্পদ বলা হয় । যেমন- শারীরিক যোগ্যতা, প্রতিভা, উদ্যোগ, দক্ষতা, সাংগাঠনিক ক্ষমতা ইত্যাদি মানবিক সম্পদ ।
৩। উৎপাদিত সম্পদ : প্রাকৃতিক ও মানবিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে যে সম্পদ সৃষ্টি হয় তাকে উৎপাদিত সম্পদ বলা হয়। যেমন- কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, কলকারখানা, যাতায়াত ও যোগাযোগব্যবস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ইত্যাদি মানুষ তৈরি করে বলে এগুলো উৎপাদিত সম্পদ ।
আরও দেখুন...